ফান্ড রেইজিং একজন উদ্যোক্তার জন্য পূর্ণাঙ্গ গাইড

ফান্ড রেইজিং : একজন উদ্যোক্তার জন্য পূর্ণাঙ্গ গাইড

লেখক: শাহ মুবারুক – Your Startup Coach

পরিচিতি

উদ্যোক্তা হিসেবে সফলতা অর্জনের অন্যতম চাবিকাঠি হলো মূলধনের সঠিক ব্যবহার। অনেক সময় একটি ভালো আইডিয়া শুধুমাত্র ফান্ডের অভাবে বাস্তবায়িত হয় না। এই ইবুকের উদ্দেশ্য হলো আপনাকে ফান্ড রেইজিং-এর প্রতিটি ধাপ সহজ ও বিশ্লেষণভিত্তিকভাবে বোঝানো, যেন আপনি নিজেই একটি সফল ফান্ড রেইজিং প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারেন।

ফান্ড রেইজিং-এর প্রাথমিক ধারণা

ফান্ড রেইজিং কি?

ফান্ড রেইজিং হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে আপনি বিনিয়োগকারীদের থেকে অর্থ সংগ্রহ করেন ব্যবসা সম্প্রসারণ বা শুরু করার জন্য। এটি ব্যক্তিগতভাবে হতে পারে, ইনস্টিটিউশনাল ইনভেস্টরদের মাধ্যমে হতে পারে বা অনলাইন ক্রাউডফান্ডিং প্ল্যাটফর্মেও হতে পারে।

কে কে ফান্ড রেইজ করতে পারে?

1. নতুন উদ্যোক্তা (Startup Founders)
2. বিদ্যমান ব্যবসার মালিক
3. এনজিও বা সামাজিক প্রতিষ্ঠান

কখন ফান্ড রেইজ করা উচিত?

1. যখন MVP তৈরি হয়ে গেছে
2. বাজার যাচাই হয়েছে
3. একটি নির্দিষ্ট Expansion plan আছে

বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে ফান্ড রেইজিং

বাংলাদেশে ফান্ড রেইজিং এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে থাকলেও বেশ কিছু সফল কেস স্টাডি আছে (Pathao, Shohoz)। আন্তর্জাতিকভাবে, এটি অনেক সহজ এবং প্রচলিত।

ফান্ডিং এর ধরণসমূহ

১. বুটস্ট্র্যাপিং (Bootstrapping)

নিজের সঞ্চিত অর্থ বা পারিবারিক সহায়তায় ব্যবসা শুরু করা। এতে আপনি সম্পূর্ণ মালিকানা ধরে রাখতে পারেন।

২. ফ্রেন্ডস অ্যান্ড ফ্যামিলি (Friends and Family)

প্রথম ধাপে আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধুদের থেকে ছোট পরিসরে বিনিয়োগ গ্রহণ করা হয়।

৩. এঞ্জেল ইনভেস্টর (Angel Investors)

উচ্চ নেটওয়ার্কসম্পন্ন ব্যক্তি যারা নতুন স্টার্টআপে প্রাথমিক পর্যায়ে ব্যক্তিগতভাবে বিনিয়োগ করেন।

৪. ভেঞ্চার ক্যাপিটাল (Venture Capital)

প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী যারা ব্যবসার দ্রুত সম্প্রসারণ ও লাভের সম্ভাবনা দেখে বিনিয়োগ করেন।

৫. ক্রাউডফান্ডিং (Crowdfunding)

অনলাইন প্ল্যাটফর্মে প্রচারণার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অর্থ সংগ্রহ করা। যেমন: Kickstarter, Indiegogo।

৬. সরকারি অনুদান বা প্রোগ্রাম

সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের অধীনে উদ্যোক্তাদের জন্য ফান্ডিং সুবিধা পাওয়া যায়। যেমন: Startup Bangladesh।

৭. কর্পোরেট ইনভেস্টমেন্ট / স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ

বড় কোম্পানি থেকে বিনিয়োগ নেয়া যারা আপনার প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের মাধ্যমে নিজস্ব বিজনেসেও উপকার পায়।

ফান্ড রেইজ করার প্রস্তুতি

বিজনেস আইডিয়া যাচাই

আপনার আইডিয়া বাজারে কতটা গ্রহণযোগ্য তা যাচাই করতে হবে। পাইলট রান, সার্ভে, ইন্টারভিউ ব্যবহার করুন।

MVP তৈরি করা

প্রাথমিকভাবে কাজ করে এমন একটি প্রোডাক্ট/সার্ভিস তৈরি করুন যা প্রমাণ করবে আপনি সমস্যার সমাধান দিতে পারছেন।

মার্কেট রিসার্চ

আপনার প্রোডাক্ট কারা ব্যবহার করবে, তাদের আচরণ কেমন, বিকল্প সমাধান কী – এসব জানতে হবে।

টিম গঠন

দক্ষ এবং পরিপূরক সদস্যদের নিয়ে একটি প্রাথমিক দল গঠন করুন যাদের ইনভেস্টর বিশ্বাস করতে পারে।

কোম্পানি রেজিস্ট্রেশন ও লিগ্যাল বিষয়াদি

আপনার ব্যবসা আইনি ভাবে রেজিস্টার্ড হতে হবে। প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট যেমন TIN, Trade License, INC/LLC প্রভৃতি প্রস্তুত রাখুন।

ফিনান্সিয়াল প্রজেকশন

আগামী ১-৩ বছরের সম্ভাব্য আয়, ব্যয়, লাভ, গ্রোথ কেমন হবে তার ভিত্তিতে একটি আর্থিক প্রক্ষেপণ তৈরি করুন।

ইনভেস্টর খোঁজা ও সম্পর্ক গড়ে তোলা

কোথায় ইনভেস্টর পাওয়া যায়?

1. LinkedIn
2. AngelList
3. StartUp Conferences
4. Incubators (GP Accelerator, YY Goshti)

কিভাবে সম্পর্ক গড়ে তুলবেন?

1. একাধিকবার Follow-up করুন
2. প্রাসঙ্গিক তথ্য দিয়ে আকর্ষণ করুন
3. পেশাদার আচরণ বজায় রাখুন

ইনভেস্টরের দৃষ্টিভঙ্গি

ইনভেস্টর মূলত দেখে:

1. বাজারের সুযোগ
2. টিমের দক্ষতা
3. গ্রোথ সম্ভাবনা
4. Exit strategy

পিচ ডেক প্রস্তুত করা

পিচ ডেক কি?

একটি প্রেজেন্টেশন যা আপনার ব্যবসার সারাংশ ৮–১২টি স্লাইডে তুলে ধরে।

প্রয়োজনীয় স্লাইড:

1. সমস্যা
2. সমাধান
3. মার্কেট সাইজ
4. ইউএসপি
5. বিজনেস মডেল
6. ট্র্যাকশন
7. টিম
8. ফিনান্সিয়ালস
9. ফান্ডিং রিকোয়েস্ট
10. কন্টাক্ট ইনফো

ফান্ডিং রাউন্ড এবং টার্ম শিট

ফান্ডিং রাউন্ড:

1. Pre-Seed
2. Seed
3. Series A, B, C...

টার্ম শিট কি?

ইনভেস্টর ও উদ্যোক্তার মধ্যে একটি প্রাথমিক চুক্তি যেখানে ইনভেস্টমেন্টের পরিমাণ, শর্তাবলী ও শেয়ার কাঠামো উল্লেখ থাকে।

Valuation, Equity, Dilution

1. Valuation: কোম্পানির মূল্য নির্ধারণ
2. Equity: বিনিয়োগের বিনিময়ে মালিকানা
3. Dilution: পরবর্তী ইনভেস্টমেন্টে শেয়ারের পরিমাণ কমে যাওয়া

নেগোসিয়েশন কৌশল

কীভাবে শেয়ার ধরে রাখবেন?

1. High valuation justify করুন
2. Proper traction ও মার্কেট প্রমাণ দিন

টিপস:

1. ইনভেস্টরের Terms ভালোভাবে বুঝুন
2. সবকিছু লিখিত রাখুন
3. একজন লিগ্যাল অ্যাডভাইজারের সাহায্য নিন

সাধারণ ভুল এবং কীভাবে এড়াবেন

1. শুধু আইডিয়ার উপর ভরসা করা
2. প্রপার প্রস্তুতি ছাড়া পিচ করা
3. অতিরিক্ত শেয়ার দিয়ে দেওয়া
4. ইনভেস্টরকে অস্পষ্ট ইনফরমেশন দেওয়া
5. লিগ্যাল ডকুমেন্ট ছাড়া ফান্ড গ্রহণ করা

সফল ফান্ড রেইজিং কেস স্টাডি

Pathao

Seed funding পেয়েছে Go-Jek এর মতো কোম্পানি থেকে।

bKash

আন্তর্জাতিক পর্যায়ে Ant Financial এর মত কোম্পানি ইনভেস্ট করেছে।

Dropbox, Airbnb

Pitching ও ইউজার গ্রোথের মাধ্যমে বিশ্বজয় করেছে।

উপসংহার

ফান্ড রেইজিং একটি আর্ট এবং সায়েন্সের সমন্বয়। এই ইবুক আপনাকে একটি সঠিক রোডম্যাপ দেয় যা অনুসরণ করে আপনি নিজেই একটি সফল রেইজিং স্ট্র্যাটেজি তৈরি করতে পারবেন। মনে রাখবেন, ফান্ড পাওয়া নয়, ফান্ড ব্যবহারে দক্ষতা আপনার আসল শক্তি।